ছুটির দিন


আযানের লগে লগে ঘুম ভাইঙ্গা গেলো। ফযর, না মাগরিব বুজতে পারতেসি না। তাড়াহুড়া কইরা উঠতে গিয়া মনে পড়লো, উঠতে তো পারুম না। কারখানা তো ছুটি। অনেক কাহিল লাগতাছে আমার। হাত-পা নাড়াইতেও অনেক কষ্ট হইতাসে। এই হলো আইলসামির ফল, বেশি বেশি বিশ্রাম করলে এমনই হয়। যাউক গা, হাতে কোন কাজ নেই, কহন আইবো তারও কোন ঠিক নেই, শুইয়া শুইয়া বরং একটু চিন্তা করি। কোলের বাচ্চাটার লগে কয়দিন পরেই আইবো পেটের বাচ্চাটাও। ওগো লাইগাই তো এতো কষ্ট কইরাও কাজ করতাসি। ওগো ভবিষ্যত নিয়া টেনশনটাও সবচাইতে বেশী।

শাহীনটা যে কি করতাছে। নিশ্চয়ই মায়ের লাইগা হা কইরা বয়া আছে। বাচ্চাটারে নিয়ে অনেক স্বপ্ন আমার। বড় হইলে সে কি করবো, তা নিয়া জামানের লগে বেশ তর্কও হয়া গেলো সেদিন। আমি কইলাম ডাক্তার। জামান কয়, ‘এমন কসাই বানায়া কাজ নেই। খালি সারাদিন টেকা টেকা করবো, রোগি বাঁচলো না মইরা গেলো হেই দিকে খেয়াল নাই। এমন মানুষ আমার লাগবো না’। সে শাহীনরে ইঞ্জিনিয়ার বানাইতে চায়। এইখানেও আমার কথা আছে। ইঞ্জিনিয়ারও তো টেকা খায়া উলটাপালটা জিনিস দিয়া বিল্ডিং বানানোর অনুমতি দিয়া দেয়। তাইলে? এরপর জামান কইলো পাইলটের কথা। সেইখানে তো দুর্নীতি নাই। আকাশে আকাশে, দেশে দেশে ঘুইরা বেড়াইবো, আর বাপ-মায়ের লাইগা কতকিছু আনবো। কিন্তু আকাশে অনেক বিপদ। না না। শাহীনরে কিছুতেই হারাইতে পারমু না। এমনে কইরা সব চাকরিই বাতিল হয়া গেলো। শিক্ষক, সাংবাদিক, সরকারি চাকুরিজীবী, কুন চাকরিটায় দুর্নীতি নাই? জামানের লগে তর্কটাও তাই শেষ হয় নাই। শাহীনের ভবিষ্যতও ঠিক হয় নাই এখনও।

জামানের সাথে পরিচয়ের কথা মনে পইড়া গেলো। কি যে মজা আছিল সেই দিনগুলান। আমি প্রত্যেক দিন কাজ শেষ কইরা বান্ধবীগো লগে বাড়ি ফিরতাম। পিছন পিছন একটা বুকা বুকা চেহারার ছেলে টিফিন ক্যারিয়ার হাতে আইতো। আমরা বান্ধবীরা ওরে নিয়ে হাসাহাসি করতাম। আমাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী আছিল রহিমা। আমরা মনে করতাম, ছেলেটা ওর লাইগাই এমন করতাছে। আমরা ঘুইরা দাঁড়াইলেই ছেলেটা কেমন জানি চেহারা বানায়া অন্যদিক চইলা যাইতো। অবশ্য কখনও কুনু খারাপ কিছু বলতো বা করতো না দেইখা আমরাও কখনও ওরে কিছু কই নাই।