বৃটিশ রাজপুত্র, আমাদের গোল্ডফিশ মেমোরি



দৃশ্যপট-:
স্থানঃ বাকিংহাম প্যালেস। তারিখঃ ২২ জুলাই
 

 
















জন্ম হয়েছে এক নতুন শিশুর। নবজাত এই রাজশিশুকে কোলে নিয়ে বাকিংহাম প্রাসাদে যাচ্ছেন প্রিন্স ডিউক অব ক্যামব্রিজ উইলিয়াম প্রিন্সেস ডাচেস অব ক্যামব্রিজ কেট মিডলটন। লন্ডনের পথে পথে মানুষের উল্লাস। অনেক দিন আগে থেকেই নাকি বিশ্ব অপেক্ষা করছিলো এই শিশুর জন্মের মূহুর্তটির জন্য। করবে নাই বা কেন? নবজাতক যে একসময় প্রায় সমগ্র বিশ্বকে গোলামে পরিণত করা রাজতন্ত্র ব্রিটেনের সিংহাসনের তৃতীয় উত্তরাধিকারী

জন্মের খবর জানার পর থেকে বাকিংহাম রাজপ্রাসাদের বাইরে ভিড় করেছে প্রচুর মানুষ। প্রাসাদের বাইরে নবজাতকের চেহারা এক নজর দেখার জন্য লম্বা লাইন পড়েছে

জন্ম তো হলো। এবার কি নাম হবে নবজাতকের? নিয়ে চলে আরো জল্পনাকল্পনা। উইলিয়াম-কেটের বংশধর ছেলে হবে না মেয়ে, এটা নিয়ে যেমন অনেক মানুষ বাজি লেগেছিলো, এবার নাম নিয়েও চলে বাজি। জর্জ, উইলিয়াম, জেমস, নাকি আলেক্সান্ডার? শেষ পর্যন্ত নাম ঠিক হয়, জর্জ আলেক্সান্ডার লুইস

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসতে থাকে অভিনন্দন বার্তা, নতুন রাজপুত্রের জন্য। শুভেচ্ছা পাঠানোর আতিশয্যে অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে যোগ দেয় বাংলাদেশও

আইন যখন প্রণেতার হাতে!
‘আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না’। বিটিভি আর বাংলা সিনেমার কল্যাণে এই বাক্যটুকু ছোটবেলা থেকেই মুখস্থ। আমরা আরো জানি, ভিলেন যখন নায়ককে পিটিয়ে লাশ বানিয়ে ফেলে, তখন পুলিশের কোন খোঁজ থাকে না। কিন্তু নায়ক যখন প্রাণ বাঁচাতে ‘ইয়া আলী’ বলে লাফিয়ে ওঠে, ঠিক তখনই হাজির হয় পুলিশ।

এমনই এক সিনেমার বাস্তব রূপ দেখা গেলো শনিবার পল্টনের মেহেরবা প্লাজায়। তবে যেহেতু সিনেমার মতো এখানে কোন স্ক্রিপ্ট ছিলো না, ছিলেন না কোন ডিরেক্টর, তাই ঘটনায় কিছুটা এদিক সেদিক হলো।

একজন ক্ষমতাশালী লোক দলবল নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে আসা দুই সংবাদকর্মীকে বেধড়ক পেটালেন। খবর পেয়ে অন্য সাংবাদিক এবং পুলিশ যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছুলো, ততক্ষণে সেই লোক আবার নিপাট ভদ্রলোক।

পুলিশ কিছু করলো না। করবে কিভাবে? ভদ্রলোকটি যে একজন আইন প্রণেতা। আইন কার হাতে থাকবে না থাকবে সেটা আইনশৃংখলা বাহিনী নিশ্চয়ই একজন আইনপ্রণেতাকে শেখাতে পারে না।

পরিবেশ নিয়ে নির্বাচনী মায়াকান্না
২৬ আগস্ট, ২০০৬ সাল। দেশের ক্ষমতায় তখন বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকার। সাত বছর আগের এই দিনে কি হয়েছিলো, তা অনেকে ভুলে গেলেও দিনাজপুরের ফুলবাড়ি নামক ছোট্ট একটি এলাকার মানুষ নিশ্চয়ই আজো ভোলে নি।

ফুলবাড়ি নামটি যাদের বিস্মৃতির গহবরে হারিয়ে গেছে, তাদের জন্য ঘটনাটার আরো একটি সূত্র ধরিয়ে দিতে চাইলে যে নামটি উঠে আসে, তা হলো এশিয়া এনার্জি। ফুলবাড়ি কয়লা খনি থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার পরিকল্পনা করেছিলো যুক্তরাজ্যভিত্তিক এই কোম্পানিটি। বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন, বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় অধিবাসীদের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও ফুলবাড়ি কয়লা প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে যায় সরকার।

অন্য পদ্ধতিতে যেখানে খনির মোট কয়লার মাত্র ১৫%-২০% উত্তোলন করা যাবে, সেখানে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে প্রায় ৯০%-৯৫% কয়লা তোলা সম্ভব, যার লোভ সামলানো যে কারো জন্যই খুবই কষ্টকর। ফুলবাড়িতে উন্মুক্ত পদ্ধতির বাস্তবায়ন করলে অল্প খরচ, শ্রম ও সময়ে অনেক বেশি কয়লা উত্তোলন করা যাবে, এই চিন্তা থেকে এশিয়া এনার্জি সরকারকে চাপ প্রয়োগ করে এই পদ্ধতি অনুমোদন দিতে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ফুলবাড়ি কয়লা খনিতে উন্মুক্ত পদ্ধতির ব্যবহার আমাদের সর্বনিম্ন যে ক্ষতিগুলো করতে পারতো, সেগুলো হচ্ছেঃ (১) মূল খনি এলাকাসহ আশপাশের আরও প্রায় পাঁচ গুণ এলাকার ভূ-গর্ভস্থ পানি খনির অভ্যন্তরে প্রবাহিত হয়ে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিক গতিতে নীচে নামাতো এবং এর সরাসরি প্রভাব পড়তো স্থানীয় টিউব-ওয়েল, অগভীর ও গভীর নলকুপগুলোর ওপর, (২) চিরদিনের জন্যে অকেজো হয়ে পড়তো হাজার হাজার হেক্টর উর্বর আবাদী জমি, (৩) শহর, গ্রামীণ বসত-ভিটা ও বনাঞ্চল ইত্যাদির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তো এবং (৪) স্থানান্তর করতে হতো কয়েক লক্ষ মানুষসহ সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

কোটা, যুদ্ধাপরাধ বনাম শাহবাগ রাজনীতি
শাহবাগ সারা বাংলাদেশ তো বটেই, দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশ বিভূঁইয়েও এখন এক সুপরিচিত নাম রাজধানী ঢাকার অন্যসব মোড়ের মতোতীব্র যানজটের এক মোড়’-এই পরিচয় ছাপিয়ে শাহবাগ অনন্য রূপ ধারণ করে গত ফেব্রুয়ারি

যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবনের রায় প্রত্যাখ্যান করে ওইদিন খানেক তরুণ-তরুণী নেমে আসে রাস্তায় মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা পরিণত হয় শত শত মানুষের বিক্ষোভে রাত পোহানোর পর হাজার, এবং দুই দিন পরেই তা পরিণত হয় সহস্রাব্দের অন্যতম বড় সমাবেশে

রাজাকারের ফাঁসি চাই’, ছোট্ট অথচ ভয়ংকর শক্তিশালী এই শ্লোগান বুকে নিয়ে ফেব্রুয়ারির মহাসমাবেশে নানা বয়স-শ্রেণি-পেশার এতো মানুষ জড়ো হয় যে, এর অর্ধেক মানুষ এলেও যে কোন রাজনৈতিক দল নিজেদের ধন্য মনে করতো

যে তরুণরা জ্ঞান হওয়ার পর থেকে রাজনীতিকে অন্তর থেকে ঘৃণা করতে শিখেছে, তারাও দলে দলে যোগ দেয় শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে কানে দুল, আর হাতে চুড়ি-ব্রেসলেট পড়া, সারাদিন রক আর হেভি মেটাল শোনা তরুণরাও প্রমাণ দিলো, দেশের প্রশ্নে আপোস করবে না তারাও

প্রথম কয়েকদিন রাজনৈতিক প্রভাব না থাকলেও খুব দ্রুতই পালটে যায় এই দৃশ্যপট যখনই নেতারা বুঝতে পারেন, এই তরুণদের দখলে আনতে পারলে বিরাট শক্তি পকেটে পোরা যাবে, তখন থেকেই শুরু হয় সমর্থনের খেলা যে সরকারের আপোসকামিতা সন্দেহ করে তরুণেরা শ্লোগান দিয়েছিলো প্রথম দিন, সেই আওয়ামী লীগই হয়ে উঠলো গণজাগরণের সবচেয়ে বড় সমর্থক