About Me
৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, মঙ্গলবার
আমার নাম শরিফুল ইসলাম। আমি কিলাস ফাইব পরযন্ত পইড়ছি। পরালেকা বুইলা গেসি সব কিসু। আমার গেরাম গাইবান্দার সুন্দরগঞ্জের পরাণ গেরাম। সাত বচ্চর ঢাকায় থাহি। আববা ডেইলি কাজ করে, আমমা ছুটাবুয়া। দুইজনেই ঢাকাত। বাড়িত একটা বউ আসে একটা ছাওয়াল আসে। আইজ হরতাল। সন্দায় সাবাগে গেলাম, বারসিটির পনচাস-সাইটটা মামা রাস্তা বন্দ কইরা দিসে। রাজাকার কাদের মুল্লার ফাসি অয় নাই, তাই রাস্তা বন্দ। তারা ফাসি চায়। কিসুখন চায়া দেখলাম, পরে ঘুইরা অন্য রাস্তা দিয়া গেলাম। গেরেজে মমিনুল কইলো ভাত পাই না ফাসি চায়।
৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, বুধবার
আইজকাও হরতাল। অনেক লাব অইসে। দুপুরের আগে দুই হাযার টেকা কামাইসি। রিস্কা টাইনা টাইনা বুইলাই গেসিলাম সাবাগের কতা। দুপুরে যাইতে গিয়া দেকি রাস্তা বন্দ। চায়ের দোকানে রিস্কা রাইখা গিয়া দেকি ওরে আল্লা। আইজকা কয়েক হাজার মানুস। মাইক লাগাইসে। খালারাও সলুগান দিতাসে। মজা লাগল। রাজাকারের হরতাল মানিনা মানিনা। পরে আমিও দিলাম। জয় বাংলা দিতাসিল। আমি দেই নাই।
৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, বৃহস্পতিবার
আমি ভাবসিলাম, দুইদিন হরতাল, রাস্তায় গারি নাই, তাই পুলিস পিটায় নাই। আইজকা সাবাগে পিডাইবো। আমি আর যাই নাই। টিপ নিয়া অনেক দূর গেসিগা। সাবাগ আসি নাই। পরে রাইতে গেরেজে মমিনুল কইলো আইজকা আরো বেশি মানুস অইসিলো। ও গেসিলো। আমি কইলাম ভাত পাই না, ফাসি চায়।
৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, শুক্রবার
রাইতে মমিনুল কইসিলো আইজ তিনটায় মিটিং ডাকসে। তারাতারি বাইরইসি আটটার সময়। জুমার নামায পরযন্ত গারি চালায়া নামায পইরা আমি আর মমিনুল সাবাগ গেলাম। পুলিশ রুপসি বাঙলার সামনে রাস্তায়
গারি বন্দ কইরা দিসে। আমার মাতা গুরায়া গেসে। লাখ লাখ মানুস। এতো মানুস কইথ্যাইকা আইলো। বাসা থাইক্কা বুরা, পিচ্চি, মাইয়া সবাই আয়া পরসে। সলুগান শুইনা আমার লুম খারায়া গেল। আমি জয় বাংলা দিয়া দিলাম। মমিনুলও। পরে মাইকে এক খালা কইল, যুদ্দের সময় সবাই জয় বাংলা বলসে, এইডা সবার, কুনু দলের না। অনেক রাইতে গেরেজে আইসি।
-----
আকাশের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে পাখিবালা শীল। ৬৫ বছরের জীবন কতো কিছুই না দেখেছে। দুর্ভিক্ষ, খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, আর সর্বোপরি ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ। খোলা আকাশের নিচে বসে চাঁদের দিকে তাকিয়ে রোমান্টিক কোন কবিতার লাইন মনে ভেসে ওঠে না তার। বরং নরম মোলায়েম চাঁদটাকে কেন যেন একটু পোঁড়া পোঁড়া মনে হয়। চোখেরই ভুল হয়তো। বয়েস তো একেবারে কমও হয়নি। পাখিবালার মনে পড়ে যায় স্বামীর কথা। মাত্র তেরো বছর বয়েসে তার বিয়ে হয়। ধর্মীয় অনুশাসনের কারণে মুখে নাম আনতে না পারলেও, স্বামীর চেহারা ঠিকই এতো বছর পরেও উজ্জ্বল পাখির কাছে। আর থাকবে নাই বা কেন। প্রেম কাকে বলে, তা তো বুঝতোই না তখনও। আর তাই স্বামীর খুনসুটি, আদর-আহ্লাদ, সবই তার কাছে খেলা মনে হতো। আর বোকাসোকা ভালো মানুষ স্বামী নিতাই শীলও সেটি বুঝতে পেরে আরো বেশী করে যেন খেলায়ই মেতে উঠতেন বউটির সাথে।
হঠাৎ মনের অজান্তেই হাসি চলে আসলো পাখিবালার মুখে। একদিন হয়েছিল কি? আশেপাশে তাকিয়ে দেখলেন পাখিবালা। কেউ দেখছে না তো আবার। বুড়ো বয়েসে অন্ধকারে একা একা খোলা আকাশের নিচে বসে হাসাটা ঠিক ভালো লক্ষণ নয়। যাই হোক। একদিন নিতাই এসে তাকে বললেন, ‘জানো পাখি? তোমারে আইজ চান্দে দেখসি’। চাঁদ আর মেঘের দিকে তাকিয়ে বিভিন্ন কিছু কল্পনা করা পাখির খেলার অংশ হলে স্বামীর এই কৌতুক মেনে নিতে চাননি তিনি। ‘যাহ, চান্দে আবার মানুষ দেখা যায় না কি!’ স্ত্রীর নিষ্পাপ এই অবিশ্বাস নিতাইকে বাধ্য করেছিল অট্টহাসিতে রাত্রির নীরবতা খানখান করে ভেঙ্গে দিতে।